মানুষের জীবনে কিছু মুহূর্ত থাকে যা চিরকাল হৃদয়ের কোণে লুকিয়ে থাকে। সময় যতই পেরিয়ে যাক না কেন, কিছু ভালোবাসা কখনো পুরোনো হয় না। এই গল্পটি এমনই এক প্রেম, অপেক্ষা আর ফিরে পাওয়ার কাহিনি।

—

প্রথম পরিচয়

২০০৮ সালের এক শীতের সকাল। ছোট্ট শহরের কলেজ ক্যাম্পাসে প্রথম দেখা হয়েছিল রাফি আর মেহজাবিনের। রাফি তখন কলেজের নতুন ছাত্র, আর মেহজাবিন সবার প্রিয় সিনিয়র। মেহজাবিনের চোখে ছিল এক অদ্ভুত মায়া—যেন চোখের ভেতরেই কথা বলা যায়।
সেদিন লাইব্রেরিতে বই নিতে গিয়ে হঠাৎ ধাক্কা লাগে তাদের। বইগুলো মেঝেতে ছড়িয়ে পড়লো। রাফি তড়িঘড়ি করে বইগুলো তুলতে গিয়ে দেখল, মেয়েটির চোখে রোদ পড়েছে—সেই আলো যেন তাকে অচেনা কোনো জগতে টেনে নিচ্ছে।

সেই দিন থেকে রাফির ভেতরে এক অজানা কাঁপুনি শুরু হলো।

—

অদৃশ্য বন্ধন

দিন গড়াতে লাগলো। ধীরে ধীরে রাফি সাহস করে মেহজাবিনের সাথে কথা বলতে শুরু করল। পড়াশোনা, স্বপ্ন, গান, কবিতা—সব কিছুতেই যেন তারা মিল খুঁজে পেত।
ক্লাসের ফাঁকে, লাইব্রেরির টেবিলে, কিংবা বৃষ্টিভেজা করিডোরে—তাদের আড্ডা যেন অজান্তেই গভীর হয়ে উঠল।
রাফি বুঝতে পারলো, সে ভালোবেসে ফেলেছে।

কিন্তু সাহস হচ্ছিল না বলতে।

—

প্রথম চিঠি

একদিন রাতে হঠাৎ সাহস করে রাফি একটা চিঠি লিখলো। কাগজের ভাঁজে শুধু কয়েকটা লাইন—

“তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অধ্যায়। হয়তো বলার মতো ভাষা নেই, তবুও জানি তুমি বুঝতে পারবে।”

পরদিন সে চিঠিটা মেহজাবিনের ব্যাগে গুঁজে দিল।

কিন্তু ভাগ্যের নিষ্ঠুর খেলা—চিঠি হারিয়ে গেল। মেহজাবিন কোনোদিনই সেটা পড়তে পারল না। আর রাফি ভেবেছিল, হয়তো মেয়েটি ইচ্ছে করেই উত্তর দেয়নি।

—

দূরত্ব

ভালোবাসার জায়গায় ভুল বোঝাবুঝি এসে দাঁড়াল। ধীরে ধীরে তাদের কথা বলা কমে গেল। মেহজাবিন বুঝতে পারছিল না কেন রাফি হঠাৎ বদলে গেল। আর রাফি ভাবছিল, হয়তো মেহজাবিন তার অনুভূতি বুঝে ফেলেছে, কিন্তু গুরুত্ব দেয়নি।

কলেজ শেষ হলো। দুজন আলাদা শহরে চলে গেলো।

—

বছর কেটে গেল

সময়ের স্রোতে কেটে গেল ১০ বছর।
রাফি চাকরির জন্য ঢাকা চলে এসেছে। জীবনে অনেক উত্থান-পতন এলেও মনের কোণে মেহজাবিন নামটা ঠিকই লুকানো ছিল।

একদিন হঠাৎ ফেসবুকে নোটিফিকেশন— “Friend Suggestion: Mehzabin Rahman.”

রাফির বুক কেঁপে উঠল।

—

আবার দেখা

মেসেঞ্জারে সাহস করে রাফি লিখল—
“অনেকদিন পর! কেমন আছো?”

কিছুক্ষণ পর রিপ্লাই এল—
“আমি ভালো আছি। তুমি?”

কথা বলতে বলতে জানা গেল, মেহজাবিন এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছে। অথচ সেই একই মায়াবী চোখ এখনো আগের মতোই উজ্জ্বল।

—

সত্য উদঘাটন

একদিন আড্ডার ফাঁকে রাফি পুরনো সেই চিঠির কথা বলল।
মেহজাবিন অবাক হয়ে বলল—
“চিঠি? আমি তো কোনোদিন পাইনি!”

হঠাৎ দুজনেই স্তব্ধ।
এতদিনের দূরত্ব, অভিমান, নীরবতার কারণ ছিল সেই হারানো চিঠি।

—

নতুন শুরু

মেহজাবিন হেসে বলল—
“তুমি যদি সত্যিই লিখে থাকতে, তাহলে আমি উত্তর দিতাম… কারণ আমিও তখন একই অনুভূতি লুকিয়ে রেখেছিলাম।”

রাফির চোখে জল চলে এলো।
সময় হয়তো অনেক দেরি করিয়েছে, কিন্তু হৃদয়ের ভালোবাসা কখনো মুছে যায়নি।

—

উপসংহার

আজ রাফি আর মেহজাবিন একসাথে।
হারানো চিঠি হয়তো তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করেছিল, কিন্তু সেই ভুলই আবার নতুন শুরুর দরজা খুলে দিয়েছে।

ভালোবাসা কখনো হারায় না—সঠিক সময়ে, সঠিক মানুষের কাছে, সেটি আবার ফিরে আসে।

—

✍️ গল